ব্যবসায় উদ্যোগ

যৌথ মূলধনী ব্যবসায়ের ধারণা

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ব্যবসায় উদ্যোগ - মালিকানার ভিত্তিতে ব্যবসায় | NCTB BOOK

একমালিকানা ব্যবসায়ের মাধ্যমে বিশ্বের বুকে ব্যবসায়ের যে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছিল কালক্রমে তা আর একমালিকানার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। একমালিকানা ব্যবসায়ের বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা বিশেষ করে মূলধনের স্বল্পতা ও একক পরিচালনা ও ক্ষুদ্র আয়তনের জন্য অংশীদারি ব্যবসায়ের উৎপত্তি হয়। কিন্তু অংশীদারি ব্যবসায়ও মূলধনের সীমাবদ্ধতা, আইনগত সীমাবদ্ধতা, স্থায়িত্বহীনতা ও অসীম দায়ের ভার থেকে মুক্ত হতে পারেনি। এক সময় মানুষের চাহিদা, প্রয়োজনীয়তা ও ব্যবসায়ের আওতা আরও বৃদ্ধি পেতে থাকে। ফলশ্রুতিতে আইনের ভিত্তিতে সৃষ্টি হয় অধিক মূলধন ও বৃহদায়তনের যৌথ মূলধনী ব্যবসায় যা কোম্পানি সংগঠন নামেও পরিচিত। মূলত শিল্প বিপ্লবের কারণে উৎপাদন ব্যবস্থায় যে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয় তার সাথে সাথে ব্যবসায় সংগঠনের প্রকৃতি ও আওতায় ব্যাপক পরিবর্তন আসে। উৎপাদন, বণ্টন ব্যবস্থা পারিবারিক গণ্ডি থেকে বেরিয়ে এসে কারখানাতে স্থান নেয়। ফলে জন্ম হয় অধিক মূলধন, সীমিত দায়, যৌথ ব্যবস্থাপনা এবং আইনগত সত্তা ও পৃথক অস্তিত্ব বিশিষ্ট যৌথ মূলধনী ব্যবসায় সংগঠনের। উল্লেখ্য, অষ্টাদশ ও উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি (১৭৫০-১৮৫০) সময়ে ইউরোপের কৃষিতে, শিল্পকারখানায়, কয়লা উত্তোলনে ও পরিবহন ব্যবস্থায় যে প্রযুক্তিগত পরিবর্তন সাধিত হয় তাকে শিল্প বিপ্লব (Industrial Revolution) নামে অভিহিত করা হয়। যৌথ মূলধনী ব্যবসায় আইনের মাধ্যমে সৃষ্ট ও পরিচালিত হয়। সর্বপ্রথম কোম্পানি আইন পাস হয় ব্রিটেনে ১৮৪৪ সালে যা “The Joint stock Company Act 1844' নামে পরিচিত ছিল। ব্রিটিশ শাসিত ভারতীয় উপমহাদেশে প্রথম কোম্পানি আইন পাস হয় ১৮৫০ সালে। ১৯১৩ সালে ভারতীয় কোম্পানি আইন আবার নতুন করে পাস হয়। স্বাধীন বাংলাদেশেও অনেক বছর যাবত ১৯১৩ সালের কোম্পানি আইন চালু ছিল। কোম্পানি আইনের ব্যাপক সংস্কার করে ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশে নতুন কোম্পানি আইন প্রবর্তন করা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশের সকল কোম্পানি ব্যবসায় ১৯৯৪ সালের আইন অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে। ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইনে কোম্পানি বলতে ‘অত্র আইনের অধীনে গঠিত ও নিবন্ধিত কোনো কোম্পানি অথবা বিদ্যমান কোনো কোম্পানিকে বুঝায়'। মূলত কোম্পানি সংগঠন হলো আইন দ্বারা সৃষ্ট, পৃথক অস্তিত্বসম্পন্ন, কৃত্রিম ব্যক্তি সত্তার অধিকারী এবং সীমিত দায়ের এমন এক ধরনের প্রতিষ্ঠান যেখানে কতিপয় ব্যক্তি মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে যৌথভাবে মূলধন বিনিয়োগ করে।

Content added || updated By
Promotion